কিন্তু হারিকেনের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে। আর সেই অন্ধকার হলো অজ্ঞানতার অন্ধকার, অশিক্ষার অন্ধকার। যাইহোক আমি বাড়ীতে এসে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য কিছু একটা করব, সেই ভরসা পাচ্ছিলাম না। ইত্যবসরে অত্র এলাকার এক কৃতিসন্তান মরহুম জনাব এ. টি. এম. ফজলুল হক (রেন্জার) সাহেব তার চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। তিনিও অত্র এলাকায় কীভাবে শিক্ষার আলো ছড়ানো যায় সেই চেষ্টাই করছিলেন। আমি তার সহযোগীনহিসেবে কাজ শুরুকরলাম। প্রথমে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে প্রাথমিক কাজ শুরু করলাম। আমিসহ এলাকার হয়েকজন শিক্ষিক বেকার যুবক, শিক্ষক হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দিলাম। প্রতিষ্ঠিত হলো পানিউমদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ১৯৭৯ সালে পূর্বপাড়া পানিউমদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেই। কিন্তু বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে জায়গা (ভূমি) এবং ঘরের প্রয়োজন। আমি ভূমি দান করলাম এবং আমার বাড়ির একটা পরিত্যক্ত ঘর ভেঙ্গে এনে ঘর বানালাম। যাত্রা শুরু হলো পূর্বপাড়া পানিউমদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ক্নিতু শুধু প্রাইমারি পাশ করার পর এলাকার ছাত্র/ছাত্রীরা কী করবে? অত্র এলাকায় কোন হাইস্কুল নেই। উত্তরে দিনারপুর হাইস্কুল প্রায় ৭/৮ কি. মি. এবং দক্ষিনে পুটিজুরি এস.সি হাইস্কুল প্রায় একই দূরত্বে অবস্থিত। এহেন অবস্থা ২/১ জন স্বচ্ছল পরিবারের ছে-েমেয়ে ছাড়া কারো পক্ষে এস.এস.সি পাশ করা তখন সম্ভব ছিল না। ১৯৮৮ সালে আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হই। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল যে কোন মৃল্যে এলাকায় একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা। যাই হোক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় ১৯৯১ সালে পানিউমদা সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রে মাত্র ৬৬ জন ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করা শুরু করলাম। প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব মো: সিরাজুল ইসলাম।
এলকার শিক্ষিক যুবকদের শিক্ষক হিসেবে নিযোগ করা হলো। শিক্ষকদের বেতন দিতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া শুরু করলাম। ক্নিতু শুরু যখন করেছি এখান থেকে তো আর পিছন ফিরা যাবে না। প্রথম অবস্থা্য় ধারনা করছিলাম হযত এলাকা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে। কিন্তু আমার ধারনা মো্টই সঠিক ছিল না। কী করব ভাবতে ভাবতে অবশেষে লন্ডনে চলে গেলাম। মনে আশা ছিল সেখানে নবীগঞ্জের তথা সিলেটের অনেক লোক আছে। তারা হয়ত এই ভালো কাজে আমাকে সহযোগিতা করবে। ক্নিতু আমার এই ধারনা পার্টে গের। কারণ পৃথিবীতে ধনী লোকের অভাব নেই কিন্তু দান করার মতো মন মানসিকতা হয়জনের আছে।
যাই হোক কযেকমাস পর লন্ডন থেকে প্রায় খালি হাতেই দেশে ফিরে এলাম। লন্ডন থাকাকালীন আমি একজন দানবীরের নাম শুনেছিলাম। তিনি হলেন দানবীর রাগীব আলী। আর শুনেছিলাম দানবীর ড. রাগীব আরী সাহেব আমাদের ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম চা বাগান নাকি লীজ নিয়েছিলেন। মনে মনে ভাবলাম এই লোকের সাথে আমাকে দেখা করতে হবে। দেশে আসার পর মনে মনে আমি াদনবরি ড. রাগীব আলীকেই খঁজতে লাগলাম। কিন্তু খোদার লীলা বুঝা ভীষন দায়। একদিন খবর পেলাম রাগীব আলী নাকি বাগানের একটি ব্যাপারে আমাকে খুঁজছেন। আমি ইমাম চা বাগানের ম্রানেজারের কাছ থেকে তাঁর গুলশানের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করলাম। একদিন আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জনাব নুরু মিয়া ও খসরুজ্জামানকে সাথে নিয়ে দানবীর ড. রাগীব আলী সাহেবের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। তিনি আমাকে তার সমস্যার কথা বললেন। আমি এলাকার অবস্থা এবং স্কুল নিয়ে আমার সমস্যার কথা বল্লাম। আমি যখন স্কলেন বিষয়ে কথা বলছিরাম তখন আমাদের সাথে দানবীর ড. রাগীব আলী সাহেবের সহধর্মিণী মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধরী ছিলেন। তিনি আমার প্রত্যেকটি কথা অত্যন্ত আগ্রহ ভরে শুনছিলেন। আমার শেষ কথাটি ছিল, আপনি যদি রাজি থাকেন তবে স্কুলটি আপনার এবং বেগম সাহেবের নামে নামকরণ করতে চাই। ততক্ষনাত বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বলে উঠলেন, তুমি এখনোও কিছু বলছ না কেন? আল্লাহ আমাদেরকে এই ধন-সম্পদ দান করেছেন গরিব-দু:খী, অবহেলিত, খেটে খায়া মানুষের জন্য কিছু করতে। তুমি চেয়ারম্যন সাহেবের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও। দানবীর রাগীব আলী সাহেব আমাকে বললেন, এলাকায় গিয়ে স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ক্রয়সহ প্রয়োজনীয় কার্য্ক্রম গ্রহণ করেন।আর স্কুল আমাদের (রাগী-রাবেয়া) নামে হবে এলাকার কোন দ্বিমত নেই। এই মর্মে একটি রেজুলেশন তৈরী করবেন।পরের দিন আমি আমার এলাকায় চলে আসলাম। এলাকার মুরব্বীগণকে নিয়ে একটি গণ রেজুলেশন তৈরী করলাম এবং স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় জমি কিনতে শুরু করলাম। আমি তিন একর জমি তিনে দানবীর রাগীব আলী সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি এক চেকে সব টাকা দিয়ে দিলেন। আর বল্লেন যত পারেন জমি কিনতে থাকুন। আমি বল্লাম এই জমিউ তো যথেষ্ট। তিনি বল্লেন একটু দুরে (ভবিষ্যত) থাকান। বাড়ীতে এসে আবার জমি ক্রয় করতে লাগলাম। জমি ক্রয়ে এলাকার মুরব্বীয়ান বিশেষ করে জনাব মরহুম এ টি এম ফঝলুল হক, জনাব মুমিন আলী মেম্বার, জনাব আলাউদ্দিন (ফেতন মেম্বার), নফিছ উল্লা মেম্বার, সুবেদার (অব.) মখলিছুর রহমান সাহেব, বদরুজ্জামান মুকুল সহ অনেকেই মনে প্রাণে সহযোগিতা করেছেন। তার চেয়েও বেশি যিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি হলেন আমার শ্রদ্ধেয় জনাব এরশাদ উল্লা ভাই। তিনিই প্রথম এই স্কুলের জন্য এক একর জমি দান করেছিলেন। অবশেষে প্রতিষ্ঠানের ক্রয়কৃত জমি একই দিনে রেজিষ্ট্রি করার তারিখ ঠিক করা হলো।
শিক্ষা জ্ঞান আলোক। জ্ঞানের মহিমান্বিত আলোকে শিক্ষার্থীদের কারুকার্যময় সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি হয়। বর্ণিল আলোয় আলোকিত, জ্ঞানের গৌরব, মননের দিপ্তী আর সৃষ্টিমুখর তৎপরতার ঐতিহ্য ধারণ করে রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ আপন মহিমায় অগ্রসরমান। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটবে সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা ও কল্পনাশক্তির পরিস্ফুটনের মাধ্যমে। সৃজনশীল প্রকাশ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে শিক্ষার্থীকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে উপনীত করাতে রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ বদ্ধ পরিকর। সে লক্ষ্যে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের প্রবর্তন করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি সকল ক্ষেত্রে অনুশীলন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার সকল সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মেধা ও জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়ে রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ তার গৌরবকে সমুন্নত রাখতে সংকল্পবদ্ধ বলে আমি বিশ্বাস রাখি। রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ ঐতিহ্য ও গৌরবের কৃতিত্বে কীর্তিমান। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলাই সকল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য এবং উন্নত জীবন গড়ার জন্য সু-শিক্ষার প্রয়োজন। মানবিক মূল্যবোধ, চারিত্রিক উৎকর্ষ ও মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য এবং বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকার জন্য সু-শিক্ষা অতীব প্রয়োজন।